চৈত্র বলে মেঘে যাবাে
বহুদিন পর আবার ইচ্ছে করছে।
লিখি কিছু উজ্জ্বল অক্ষর
বহুদিন থেমে ছিলাম অসমাপ্ত বাক্যে।
বহুদিন ভাবিনি সমুদ্রের ফেনায় জ্যামিতিক সংসার
বহুদিন পর শােকগ্রস্থ জননীর মুখে কথা ।
যখন কেবল শূন্যতায় ধাবমান ষাড়
যখন অনেক রাত কেড়ে নিলাে নিষ্ঠুর শীত
যখন প্রজ্ঞার পাথরে চাপা পড়ে যায় প্রেম
যখন বিপুল যৌবনে বসে থাকে বৃদ্ধ কনফুসিয়াস
যখন একটি কিশাের মনসার ক্রোধে আক্রান্ত ছিলাে
তখন কে তার হাতে তুলে দেয় স্বপ্নের আঙ্গিক।
লবন নিজেই নষ্ট করে তার ধাতব স্থান।
তখন
তুমিও ছিলে ইচ্ছার সম্রাজ্ঞী
খােলসের ভেতর ঢুকে গেছাে কুসুম
নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছাে প্রথম গর্ভের ফুল ।
রােদুরে তখন ভীষণ অনিহা তােমার
পিতৃভক্তির দোহাই দিয়ে তখন তুমি
খুজছাে নিরাপদ ইষ্টিশনের সুশােভন রেলগাড়ি।
তারপর অনেক মেঘ জমে জমে
প্লাবনে ভেসে গেলাে স্থির চোখ
জ্যোৎস্নার ভূতে কালীদহে ডুবতে ডুবতে
হঠাৎ শুনলাম বেহুলার ডাক
কাধে হাত রেখে সুমন্ত হাওয়ায়
বাংলার যুবক শেষ চৈত্রে ঘুমায়।
তারপর আবার ফিরে আসি চেনা গলিতে
বিয়ারের মাত্রা কমে
কমে সন্ধ্যার পানীয়
তবু দেখি কালাে মহিষের বাঁকা শিং
আমার রাস্তায় কেবল পরে থাকে মরা পাখি।
স্বেচ্ছায় এসেছিলাে
স্বেচ্ছায় চলে গেছে বেহুলা।
ততদিনে বুঝেছে কিশাের
মনসা বেহুলার মাসী হয়।
তারপর অকস্মাৎ ঠাণ্ডায় কালােকফি
তােমার অপ্রস্তুত চিঠি
কি অসাধারণ কবিতা লিখেছাে তুমি
পড়ি
বারবার পড়ি
শূন্যে হাত তালি দিই
ঘুম ভেঙ্গে যায় কালাে বিড়ালের
ঘর ছেড়ে উঠানে আসি
উঠানের কৃষ্ণচূড়ায় দুলছে তােমার লাল রুমাল ।
এতদিন
এতদিন পরে আবার একুশ বছর বয়স।
তােমার চিঠির প্রতিটা শব্দ যেন
আস্তিকের পবিত্র কোরআনের কালাে অক্ষর।
বানান করে পড়ি
যেনবা অনুসন্ধান করি
ইমাম গাজ্জালীর গুঢ় অর্থ।
এ যেন বীজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিশাল বৃক্ষ।
কী অপরাধে?
এতদিন থেমে ছিলে!
কি করে থেমে থাকে থৈ থৈ যমুনা।
ফুলের নামে নাম তােমার
ফুলের ভেতর আরাে গভীর ফুল
চাঁদের মধ্যে চাঁদ হয়ে থাকো
সােনালি যৌবনের সুহৃদ।
তােমাকে ছাড়া বাঁচেনি কখনাে কেউ
তুমি ভিন্ন অন্য কোনাে অভিধান নেই
তােমাকে ছাড়া কি করে পাব
স্বপ্নের সােনালি অক্ষর।
তােমার নীল চিঠি
যদি আরও আগে লেখা হতাে
যদি আরও আগে
পেখম খুলে দিত নীল ময়ূরী
তবে বেঁচে যায় আমার বন্ধু আনিস
বিষ পান থেকে।
যদি ডেকে উঠত কোনাে বেগানা কণ্ঠ
তবে জ্যোৎস্নার হাত থেকে বেঁচে যায়
কিশােরী রুনা।
ট্রেন তারে কেটে চলে গেছে মাঝরাতে
কবরে কেউ লেখেনি ফলক।
অনেক দিন পর টেবিলে বসেছি
বৃষ্টির অবসরে
আমার সমস্ত বাগান চলে গেছে
তােমার দখলে
বিনা বৈশাখিতে উড়ে যায় সমস্ত
চেতনার ফুল
যুদ্ধ জাহাজে ছুটে চলেছি বৃষ্টির
প্রবল ধারায়।
সত্যের মুখােমুখি এখন
মুখােমুখি বসেছি প্রশ্নের
প্রশ্নের ভাষা ল্যাটিন
প্রশ্নের ভাষা গ্রীক
যদি প্রশ্নের ভাষা হয় ভাষাহীন
যদিবা মুখােমুখি দুজন মানুষ
যদিবা একে চলে যেতে চায়
অপরের দখলে
তবে এবারের বর্ষণের শেষে
শস্যে ভরে যাবে আমাদের জনপদ।
স্থির মানুষ
স্থির বিশ্বাস
স্থির শূন্যতা
না
কারাে দখলে যাবে না আমাদের প্রতিভা।
আমরা বরাবর ব্যতিক্রম ভাগ করে খাবাে
খাবাে স্বাভাবিকতার সবকটা ফল।
একবার যেন এরকম বলেছিলে
কি চাও?
বোঝনা
বােঝনা কি চাই?
তােমাকে চাই
তােমার ভেতরে যেতে চাই
তােমার অস্তিত্বে যেতে চাই
তােমার শরীরে যেতে চাই
তােমার ভেতর আমাকে
আমার ভেতর তােমাকে পেতে চাই
মেঘের ভেতরে চাই রংধনু হতে।
জীবনের ভেতর মৃত্যুকে চাই
চাই মৃত্যুর ভেতর জীবন
কুমারীর ভেতর বধূয়াকে চাই
চাই বধূর ভেতরের কুমারী।
শরীরের ভেতরে মাংস চাই চাই
মাংসের ভেতরের ঘ্রাণ।
ভালােবাসায় অভিমান চাই
ঘৃণার মধ্যে চাই ভালােবাসা
প্রতিদিন পরাজিত হতে চাই
চাই অন্ধকারে নির্দোষ আক্রমন।
অন্ধকারে ভূত হতে চাই
চাই দীর্ঘ চুলের ছায়া
শরীরের সুশােভন ঘ্রাণে
জলমগ্ন মাছ হতে চাই।
চাই সাধ্য মতাে ভেতরের সঙ্গীত
চাই করতলে সবটুকু জ্যোৎস্না ।
চাই নির্মাণ
চাই চোখের আয়না।
চাই সংসারে মেধা
চাই সন্ন্যাসী
চাই সংসারহীনতা
চাই মেধাহীন ঝগড়া
চাই পরাজিত দ্বীপে শস্যের সম্ভার ।
চাই বেদনার ঘন নীল
চাই সরিষার ভরা ক্ষেত
চাই আরােহণ
চাই পতন।
ভালােবেসে পেতে চাই বর্তমানে
ভালােবেসে যেতে চাই সম্ভাবনায়
ভালােবেসে দিতে চাই স্বাস্থ্য
মাংস লােভী কুকুরের পাশে হতে চাই
নিরামিষ ভােজী সন্ন্যাসী।
চাই জন্মের অধিকার
চাই হত্যার অধিকার
কৃষ্ণের হয়ে রাধাকে পেতে চাই সবটুকু।
চাই অদ্ভুত খেয়াল
চাই পিতার শাসন
চাই অন্ধকারে আলাে
আলােতে চাই অন্ধকার।
যিশু হতে চাই
পশু হতে চাই
নানান কৌশলে।
তােমার মুখ দেখে দেখে
বরফের নিচে জমে যেতে চাই
বেহুলার হাত থেকে বেঁচে।
পারবে না?
পারবে
মানুষকেই জয়ী হতে হয়।
বিপরীত স্রোতে কত কেটেছি সাঁতার
নােনা জলে ভেসেছে বুকের শপথ
সেই কবে রেখেছিলে এক জোড়া পা
এখনাে ছাপ তার জামার ভিতর ।
ভয় নেই
যতটুকু চাওয়া আমার
তার সবটুকুই পারাে তুমি
যতটুকুই পারাে তুমি
ততটুকুই চাওয়া আমার।
জানােতাে আমার ঈশ্বর নেই
তুমি ঈশ্বর হতে পার
জানােতাে আমার বিশ্বাস নেই
তুমি বিশ্বাস হতে পারাে
জোকাষ্টা আমার
জননী
কেবল তােমার সম্মুখে
হাঁটু গেড়ে বসে যেতে পারি
শিশুর মুখােমুখি ।
একবার এরকম মনে হয়
ভয় হয়
যেনবা যার সাথে সংসার হয়
তার সাথে ভালােবাসা হয় না
আর ভালােবাসা হয় যার সাথে
তার সাথে হয় না সংসার।
এই রকম ভাবতে ভাবতে
পার হলাে কৈশাের যৌবন
তবু আমার শরীর থেকে কোনােদিন
খুলে না কষ্টের জামা।
মনে হয় এরকমও একবার উচ্চারণ করেছিলে
কষ্ট যেন না ছোঁয় আমারে।
আমরা যেন হই জনম সুখী।
তুমি কি জাননা?
মানুষ সুখী হতে পারে
শিল্পীর সুখ বলে কিছু নেই।
আমরাতাে উপনিষদের সেই দুই পাখি
একজন খায় আরেকজন দেখে!
জননী
প্রিয়তমা
তােমাকে লিখবার
বিপুল আগ্রহ
রাত্রির শেষে।